ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নগরপিতা নির্বচনের ভোটের উৎসব মঙ্গলবার। সিটি নির্বাচনের এই ভোট উৎসবকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হবে। উৎসমুখর পরিবেশে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক ভোটার এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সব ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের তিনি ভোট প্রদানের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা ভোটারদের অনুরোধ করব- তারা যেন ‘ফেষ্টিভ (উৎসব) মুডে’ ভোট কেন্দ্রে যান। এই নির্বাচনে অন্য সময়ের তুলনায় তিন-চারগুন বেশি আইন-শৃঙখলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, আনসার, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি মিলে প্রায় ৮০ হাজারের মতো নিরাপত্তাকর্মী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে। এদের সঙ্গে মাঠে থাকবেন ৫শ’ ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসি সচিব আরও জানান, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য নিরাপত্তায় থাকবে। এ বিবেচনায় ২ হাজার ৭০৫টি ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৬২ হাজার নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। এছাড়া তিন সিটি’র প্রতি সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে পুলিশ, আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। সেই সঙ্গে ভোটকেন্দ্র বিবেচনায় ৭০ প্লাটুন বিজিবি, ৭ প্লাটুন কোস্টগার্ড ও র্যাবের ১শ’টি টিম কাজ করবে। আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব-পুলিশের বিশেষ টিম থাকছে।
এছাড়া ক্যান্টনমেন্টে তিন ব্যাটালিয়ন সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা যখনই মনে করবেন, বার্তা পেয়ে তখনই সেনাবাহিনী চলে আসবে।
এদিকে সিটি নির্বাচন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল থেকেই তিন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ব্যালট পেপারসহ সবধরনের মালামাল প্রিজাইডিং অফিসারদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কমিশন প্রিসাইডিং, সহকারি প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার এই তিনটি পদে ৪৯ হাজার ৩৩৩ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে প্রিসাইডিং অফিসার ১ হাজার ৯৩ জন, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ৫ হাজার ৮৯২ জন ও পোলিং অফিসার ১১ হাজার ৭৮৪ জন। দক্ষিণে প্রিসাইডিং অফিসার ৮৮৯ জন, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ৪ হাজার ৭৪৬ জন ও পোলিং অফিসার ৯ হাজার ৪৯২ জন। চট্টগ্রামে প্রিসাইডিং অফিসার ৭১৯ জন, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ৪ হাজার ৯০৬ জন এবং পোলিং অফিসার ৯ হাজার ৮১২ জন।
এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ জন রিটার্নিং অফিসার ও ১২ জন সহকারি রিটার্নিং অফিসার, ঢাকা দক্ষিণে ১ জন রিটার্নিং অফিসার ও ১৯ জন সহকারি রিটার্নিং অফিসার এবং চট্টগ্রামে ১ জন রিটার্নিং অফিসার ও ১৪ জন সহকারি রিটার্নিং অফিসারসহ মোট ৪৮ জন কর্মকর্তা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
তিন সিটিতেই ভোটকেন্দ্র পাহারায় গোপন পর্যবেক্ষক হিসেবে ৪৫ কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছে ইসি। কমিশনের তথ্যমতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৯ জন, ঢাকা উত্তরে ১২ জন এবং চট্টগ্রামে ১৪ জন কর্মকর্তা এ দায়িত্ব পালন করবেন। তারা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটার এবং প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করবেন। নির্বাচন চলাকালীন কেন্দ্রের ভিতর কিংবা বাইরে কোন অসঙ্গতি দেখলে তাৎক্ষণিক রিটার্নিং অফিসার এবং কমিশনকে জানাবেন তারা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা উত্তর সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৩৬ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১২টি। এখানে ভোটার ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৪ হাজার ৭০১জন, নারী ভোটার ১১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৩ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৯৩ ও ভোটকক্ষ ৫ হাজার ৮৯২টি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৭ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৯টি। এখানে ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯ হাজার ২৮৬ জন, নারী ভোটার ৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৭ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৮৯ ও ভোটকক্ষ ৪ হাজার ৭৪৬টি।
চট্টগ্রাম সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৪১ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৪। এখানে ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ জন, নারী ভোটার ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন। ভোটকেন্দ্রের ৭১৯ ও ভোটকক্ষ ৪ হাজার ৯০৬টি।
নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটিতে ৪৮জন মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে সবমিলিয়ে ১ হাজার ১৮৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ১৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ২৮১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৮৯ জন। দক্ষিণে মেয়র পদে ২০ জন, সাধারণ কাউন্সিল পদে ৩৯০ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯৭ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে মেয়র পদে ১২ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১৩ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬২ জন রয়েছেন।
নির্বাচনী এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। ভোটের দিন (মঙ্গলবার) নির্বাচনী কাজ ছাড়া সকল প্রকারের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এছাড়া এ এলাকার বাসিন্দা ছাড়া ২৫ এপ্রিল থেকেই বহিরাগত ব্যক্তির অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটের পরের দিন পর্যন্ত সিটি এলাকায় কোন বহিরাগত অবস্থান করলে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে গত ২৫ এপ্রিল থেকেই মোটর সাইকেল এবং ২৮ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২৯ এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত সব ধরনের মোটরযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। তবে প্রার্থী, প্রশাসন ও অনুমোদিত ব্যক্তি এবং জাতীয় হাইওয়ের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের ১৪ মে। এরপর নানান জটিলতায় নির্বাচন না হওয়ায় সাদেক হোসেন খোকা অতিরিক্ত ৪ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। নগরবাসীকে অধিকতর সেবা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ডিসিসিকে উত্তর ও দক্ষিণ এ দু’ভাগে বিভক্ত করেন। এরপর থেকে প্রশাসক নিয়োগ করে চালানো হচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশন। প্রায় ৮ বছর পর দুই নগরপিতা পেতে যাচ্ছেন রাজধানীবাসী।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটিতে সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৭ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
-jagonews